Jump to content

অষ্টগ্রাম হাউলিবাড়ি

Play
Season 1, episode 6
9 min / Published

কিশােরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত অষ্টগ্রাম উপজেলায় অষ্টগ্রাম দেওয়ানবাড়ি অবস্থিত। কুলিয়ারচর অথবা ভৈরব হতে নৌপথে অষ্টগ্রাম দেওয়ানবাড়িতে যাওয়া যায়। নবাব ঈশা। খার পৌত্র মনােয়ার খাঁর অধস্তন ১১ পরুষ দেওয়ান গােলাম হায়দার অষ্টগ্রামে বাস করতেন। সে থেকেই এ দেওয়ানবাড়ি প্রতিষ্ঠা লাভ করে । গােলাম হায়দারের পৌত্র আলী হায়দার নশা মিয়ার বংশধরগণই বর্তমান ঘাগরায় বাস করছেন। সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরউদ্দিন (রহ.) বংশীয় সৈয়দ আবদুল করিম (রহ.)। (আলাইমিয়া) সাহেব বিবাহ করে সুলতানশী হতে অষ্টগ্রাম গিয়ে বসবাস শুরু করেন। আলাই মিয়া সাহেবের মাজার অষ্টগ্রাম দেওয়ানবাড়িতে রয়েছে। পরবর্তীতে কালে তার অধস্তন পুরুষ ভাগলপুর চলে আসলে সেখানকার সম্পত্তি তার অপর ভ্রাতাৈিসয়দ আবদুল ব হেকিম ও আঃ কবীরের নামে রেকর্ড করে দেন এবং তথায় অদ্যাবদি তাঁরা আছেন। এ ‘ বাড়িকে বর্তমানে হাউলিবাড়ি বলা হয়ে থাকে ।

সুফি সাধক হযরত সৈয়দ আবদুর করিম (রহ.) প্রকাশ্যে আলাই মিয়া সাহেব তরফের সুপ্রাচীন সুলতানশীরে পুরাতন জমিদারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার সদর থানাতেই সুলতানশী অবস্থিত। কিন্তু আলাই মিয়া সাহেবের কর্মময় জীবন জড়িত অষ্টগ্রাম হাউলিবাড়িতে। | সিলেট ও ময়মনসিংহ জলমগ্ন হাওড় এলাকায় স্মৃতি বহন করে যে কয়জন খ্যাতনামা জমিদার ছিলেন সেগুলাে বর্তমানে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় বিরাজমান। কিঞ্চিৎ শুষ্ক মৃগনাভী সদৃশ আজো বসন্ত সমীরণে তার সৌরভ বহন করে পরাভিত কণ্ঠে সুমধুর তান, পাপিয়া কাকলি, শ্যামা দোয়েলের মন মাতানাে ঝংকার, পিয়ানুর সুরের ন্যায় আজও মানুষকে সেই পুরাতন স্মৃতির আকর্ষণে আকৃষ্ট করতে পারছে। | অষ্টগ্রাম দেওয়ান বংশের আদি পুরুষ দেওয়ান মনােয়ার খা প্রকাশ আজদর খা দিল্লিতে সেনাবিভাগে ছিলেন। তিনি শাহী বংশের লােক ছিলেন। দিল্লিতে বাদশা তার পূর্ণ পরিচয় পেয়ে ও তার গুণে মুগ্ধ হয়ে ৭০নং জমিদারি জোয়ান শাহী পরগণা তামার পাতে লিখে দেন। তিনি সাতজনসহ এ পরগণার জংলাবৃত এক স্থানে উপস্থিত হলেন। স্থানটি কিশােরগঞ্জ জেলার পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত । তাঁরা আটজনে পরামর্শ করলেন এ স্থানেই আমরা বসবাস করবাে। আটজনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থানটি বসবাসের যােগ্য বিবেচিত। হলাে। তারা আটজন চিন্তা করে এ স্থানের নামকরণ করেন অষ্টগ্রাম বা আটগাঁও।

তারা যে স্থানটি নির্দিষ্ট করে বসবাস করতে ছিলেন, সে স্থানটিই অষ্টগ্রাম হাউলিবাড়ি বা নয় কোশা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত। আজও ভগ্ন প্রাসাদ ইটের স্তুপ, পাকা ঘাটলা। চারদিক দেওয়াল বেষ্টিত দেয়ালের চিহ্ন দেওয়ানবাড়ির ঐতিহ্যের পরিচয় দিচ্ছে। এছাড়াও বাড়ির পূর্ব ও পশ্চিমে বিরাট দুটি দিঘি অনুমান ১৪/১৫ একর আজও জমিদার বংশের স্মৃতি বহন করছে।

উক্ত জমিদার বংশের মেয়ে জমিদার চান্দ বিবি সাহেবা। তাঁর স্বামী ছিলেন দেওয়ান নূর হায়দর সাহেব। তার একমাত্র কন্যা জিন্নচান্দ বিবিকে হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত সুবিখ্যাত সুলতানশী হাবেলির সৈয়দ শাহ ছাবের সাহেবের নিকট বিবাহ দেন। তিনি ছিলেন। ইমাম হুসাইন (রহ.)-এর আওলাদ এবং হযরত শাহ জালার সাহেবের বিশিষ্ট সঙ্গী সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রহ.)-এর বংশধর।

তার ঔরসে তিন পুত্র-সৈয়দ আলাই মিয়া সাহেব, সৈয়দ মলাই মিয়া সাহেব ও সৈয়দ জলাই মিয়া সাহেব জন্ম নেয় । চান্দ বিবি সাহেবের একমাত্র ছেলে সন্তান ছিল দেওয়ান করম রেজা। তিনি কিশাের বয়সেই পরলােকগমন করেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন, তার মৃত্যুর পর চাঁদ বিবি সাহেবা সৈয়দ আলাই মিয়া সাহেবকে জমিদারি প্রদান করেন। তিনি জমিদারি প্রাপ্ত হয়ে জমিদারি পরিচালনা করতে থাকেন। তার ছােট ভাই জলাই মিয়া সাহেবও তার সঙ্গে ছিলেন। দেওয়া নূর হায়দর সাহেবের দ্বিতীয় বেগমের এক সন্তান ছিল দেওয়ান আলী হায়দার। তিনিই নসা মিয়া নামে পরিচিত। তিনি জমিদারির কিছু অংশ পেয়ে মিঠামন থানাস্থিত ঘাগড়া গ্রামে বসবাস করতে থাকেন। আজও তার বংশধরগণ ঘাগড়ায় বসবাস করে তাঁর স্মৃতি বহন করছে।

হযরত সৈয়দ আলাই মিয়া কয়টি বিবাহ করেছিলেন তা জানা যায় নি। হযরত আলাই মিয়া সাহেবের দুই পুত্র-সৈয়দ নােয়াব মিয়া সাহেব ও সৈয়দ লাল মিয়া সাহেব ও এক কন্যা ছিল । নওয়াব মিয়া সাহেব ও কন্যাটি বাল্য বয়সেই দেহত্যাগ করেন। লাল মিয়া সাহেব বয়ঃপ্রাপ্ত হলে বাজিতপুর থানাস্থিত ভাগলপুর দেওয়ান সাহেবের কন্যাকে বিবাহ করেন। দেওয়ান সাহেবের কন্যা ছিলেন অর্ধেক জমিদারি মালিক। কাজেই জমিদারি পরিচালনার জন্য বাধ্য হয়ে তাকে ভাগলপুরে থাকতে হয়েছে। হযরত আলাই মিয়া সাহেব সংসার বিরাগী ছিলেন। জমিদারি পেয়ে জমিদারি রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি তার কোনাে খেয়াল ছিল । সর্বদা তিনি আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। এ জন্য জমিদারি ক্রমান্বয়ে বিনষ্ট হতে থাকে।

তার প্রধান বাক্য ছিল “ত্যাগের ভিতরই খােদা প্রাপ্ত হয়, ভােগের ভিতরে নয়”। তার একমাত্র পুত্র লালমিয়া সাহেব জমিদারি পরিচালনায় যাওয়ার পর হযরত আলাই মিয়া সাহেব পংসার হতে পূর্ণভাবে মুক্ত হয়ে বাড়ির বাইরে একটি পণ্য কুটিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সেখানে দিবা-রাত্র ধ্যানমগ্ন থাকতেন। তখন হতে হাজার হাজার হিন্দু, মুসলমান, সাক্ষর, রক্ষর, খান্দানি, আখান্দানি লােক তাঁর নিকট শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে শুরু করে। সেই স্কুল শিরমনি দেহ ত্যাগের পূর্বাপর অসংখ্য কেরামত ও গুণাবলি প্রবীণদের মুখে শুনা যায়। তার মাজার শরিফ প্রসিদ্ধ হাউলিবাড়ির সামনে রয়েছে। প্রতি বছর মহা সমারােহে মহররম ও ওরশ শরিফ উদযাপিত হয়ে থকে।

Episode ratings
Please log in or sign-up to rate this episode.
This episode is part of the Dr Elias series
exponentials.tv উত্পাদনশীলতা, আর্থিক, স্বাস্থ্য, ফিটনেস, মাইন্ডফুলেন্স ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে বর্তমান বিশ্বের সাফল্য এবং বৃদ্ধির গল্পগুলিকে কেন্দ্র করে
exponentials.tv
A podcast by exponentials.tv
exponentials.tv - a web 3 media outlet focusing on todays exponential success stories and the metaverse.
Episode comments

Join the conversation

You can post now and register later. If you have an account, sign in now to post with your account.

Guest
What do you think about this episode? Leave a comment!

×   Pasted as rich text.   Restore formatting

  Only 75 emoji are allowed.

×   Your link has been automatically embedded.   Display as a link instead

×   Your previous content has been restored.   Clear editor

×   You cannot paste images directly. Upload or insert images from URL.

×

Important Information

By using this website, you accept the use of cookies in accordance with our Privacy Policy.